বিপিএল দেশের ক্রিকেটে উন্নয়ন ঘটাবে

বিশ্বজুড়ে ক্রিকেটকে আনন্দ-উপভোগের বিরাট উপলৰ হিসেবে উপস্থাপন করেছে টি২০ ম্যাচ। প্রায় প্রতিটি টেস্ট খেলুড়ে দেশই ক্রিকেটকে বিনোদনের পর্যায়ে নিতে ৰুদ্র ফরমেটের এই আয়োজন করে থাকে। তবে বাংলাদেশ ওই ক্ষেত্রে খুব একটা এগুতে পারেনি এবং আনত্মর্জাতিক ক্রিকেটেও বাংলাদেশ তেমন একটা টি২০ খেলে না। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড অকল্যান্ডে প্রথম আন্তর্জাতিক টি২০ ম্যাচ খেলার পর মোটামুটি প্রতিটি দ্বিপাৰিক সিরিজেই দলগুলো টি২০ ম্যাচ খেলে। তবে বাংলাদেশ সেভাবে পরিচিত হয়ে উঠতে পারেনি এই ফরমেটের ক্রিকেটেও। তবে সর্বপ্রথম টি২০ ক্রিকেটকে ভিন্ন উচ্চতায় নিয়ে যায় ভারতীয়রা। টি২০ ক্রিকেটকে জাঁকালো আর বাণিজ্যিকভাবেই উপস্থাপন করেছে তারা। তবে এবার বাংলাদেশেও প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা পাওয়া ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগের (আইপিএল) আদলে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। এ উদ্যোগকে প্রশংসনীয় দৃষ্টিতেই দেখছেন টেস্ট ক্রিকেটে মিঃ ফিফটি নাম পাওয়া জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন। তাঁর মতে, বিপিএলের মতো একটি আসর আয়োজনের ফলে দেশের ক্রিকেটে একটি বাড়তি জোয়ার আসবে এবং দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে কয়েক ধাপ। হাবিবুল মনে করেন, বিপিএল হওয়াতে প্রতিটি ক্রিকেটারের একটা আগ্রহ থাকবে এর দিকে এবং সে কারণেই প্রতিযোগিতাও বৃদ্ধি পাবে অনেক বেশি। গতকাল বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটের আসর প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগ শুরুর দিনে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দৈনিক জনকণ্ঠের কাছে এসব কথা বলেন হাবিবুল।
টি২০ ক্রিকেট যে কতটা উন্মাদনা আর উপভোগের বিষয়বস্তু হতে পারে সেটা দেখিয়েছে আইপিএল। এবার তার আদলে বাংলাদেশে হতে যাচ্ছে বিপিএল নতুন বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি। ওই বিষয়টিকে খুবই ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল। তিনি বলেন, ‘বিপিএলের উদ্যোগ নিঃসন্দেহে দারম্নণ একটা ব্যাপার। এ রকম একটি আসর বাংলাদেশে আগে হলে আরও ভাল হতো। আইপিএলের মতো একটি টুর্নামেন্ট হচ্ছে বাংলাদেশে। ওই ব্যাপারটি নিয়ে দেশের ক্রিকেটাররাও অনেক উৎসাহী। এ কারণে ক্রিকেটে প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হবে। দেশের ক্রিকেটের জন্য এটা একটা ভাল দিক। নিয়মিত এ আসর হলে দেশের ক্রিকেট এগিয়ে যাবে।’ তবে আইপিএলের মতোই টুর্নামেন্ট হলেও। বিশেষভাবে লৰণীয় ব্যাপার হচ্ছে আয়োজনের সার্বিক বিষয়াদি আইপিএল অনুসারে হলেও সেটার তুলনায় বিপিএলে টাকার পরিমাণ অনেকটাই কম থাকছে। তবে বিদেশী ক্রিকেটাররা ইতোমধ্যেই বিপিএল খেলতে নিজেদের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং বিপিএল কতর্ৃপৰও জানিয়েছে এ আসরের জন্য অনত্মত ৭৫ বিদেশী ক্রিকেটারকে নিলামে তোলা হবে। ওই বিষয়টিও হাবিবুল ইতিবাচকভাবেই দেখছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক বেশি বিদেশী খেলোয়াড় বাংলাদেশের একটি টুর্নামেন্টে খেলছে যা সত্যিই ভাল একটা ব্যাপার। কারণ এতে করে দেশের ক্রিকেটাররা তাঁদের কাছাকাছি থেকে খেলার সুযোগ পাওয়ার কারণে অনেক কিছু শিখে নিজেদের খেলায় উন্নতি করতে সৰম হবে।’ বিশেষভাবে লৰণীয় আইপিএল মার্চ-এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে এবারও। আর তার আগেই বিপিএল। এ কারণেই বিদেশী ক্রিকেটাররা প্রাক-আইপিএলের প্রস্তুতিও সেরে ফেলতে পারবেন এ আসরে। তবে আইপিএলে প্রতিটি ম্যাচে বিদেশী ক্রিকেটার খেলতে পারেন ৪ জন করে আর বিপিএলে খেলবেন ৫ জন করে। ফলে প্রতিটি ম্যাচে দেশের ৬ ক্রিকেটারের সুযোগ থাকবে খেলার। ওই বিষয়ে হাবিবুল বলেন, ‘এতে বরং ভাল হয়েছে। দলে থাকার জন্য প্রতিযোগিতার তৈরি হবে। আর বিদেশী ক্রিকেটার বেশি থাকলে বড় কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি দল কিনতে আসবে। বিপিএল নিয়ে বিশ্বব্যাপী আগ্রহ তৈরি হবে।’ বাংলাদেশে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের পাশাপাশি সবসময়ই অন্য কোন লীগ চলেছে। এর আগে টি২০ ক্রিকেটের পোর্ট সিটি লীগ (পিসিএল) হয়েছে দু’বার। কিন্তু দেশে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট হয় একটি মাত্র। ওই বিষয়ে হাবিবুল বলেন, ‘প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট বাংলাদেশে কম হচ্ছে বিষয়টি তো এমন নয়। বরং বিপিএল হওয়াতে ক্রিকেটাররা শিখবে কীভাবে রান তুলতে হয় আর কীভাবে বোলিং করতে হয়। তাই যেকোন ফরমেটের জন্যই এটা উপকারী হবে।’ এতবড় একটি আসর হবে বাংলাদেশে যার অধিকাংশ ম্যাচই হবে মিরপুরের সেস্না এ্যান্ড লো উইকেটে। দলগুলোর খুব কম রানে ধসে পড়ার অনেক রেকর্ড আছে এখানে আনত্মর্জাতিক ম্যাচগুলোয়। আর টি২০ ক্রিকেট হচ্ছে ধুমধারাক্কা ব্যাটিংয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জন। তবে ওই ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেন হাবিবুল। তিনি বলেন, ‘টি২০ বলেই যে শুধু রান করতে হবে এমন নয়। ক্রিকেটাররা কেমন পারফরমেন্স করবে সেটাই আসল ব্যাপার। মিরপুরের উইকেটেও অনেক বড় রান হওয়ার রেকর্ড আছে। আর বিপিএলের জন্য নিশ্চয় আলাদাভাবে উইকেট তৈরি করবে সংশিস্নষ্টরা।’

আপনার মতামত দিন