চল্লিশেই চালশে নয়
বিশ্বকে তাঁর দিকে চোখ তুলে তাকাতে বাধ্য করেছিলেন সিউল অলিম্পিকে। তখন বয়স ছিল মাত্র ১৭। তারুণ্যে উদ্ধত অহংকার দিয়ে জ্যানেট এভান্স সেবার মেয়েদের সাঁতারে জিতে নিয়েছিলেন তিনটি সোনা। গড়েছিলেন ৪০০ মিটার ফ্রি-স্টাইলের নতুন বিশ্ব রেকর্ড।
সেসব অনেক দিন আগের কথা। এভান্স সেই স্মৃতি তুলে রেখেছিলেন হূদয়ের অ্যালবামে। কিন্তু ‘…সে কি ভোলা যায়’ গেয়েই তৃপ্ত নন তিনি। নন বলেই আরও একবার অলিম্পিকের সাঁতার পুলে ঝাঁপ দিতে তিনি প্রস্তুত। যদিও তাঁর বয়স এখন ৪০!
সাঁতার ছেড়েছিলেন বেশ কিছুদিন হয়ে গেল। ঘরকন্নার কাজে মন দিয়েছিলেন। কিন্তু হুট করে মনে হলো, আরও একবার চেষ্টা করে দেখাই যাক না। আর তাই দুই সন্তানের জননী আবারও নেমে পড়েছেন লড়াইয়ে। অবশ্য চ্যালেঞ্জটা মোটেও সহজ নয়। আগে জায়গা করে নিতে হবে যুক্তরাষ্ট্রের অলিম্পিকগামী সাঁতার দলে। তারপরই না পূরণ হবে স্বপ্ন।
সাঁতারে তাঁর চতুর্থ ও সর্বশেষ সোনাটি এসেছে ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিকে। এরপর পেরিয়ে গেছে ঠিক ২০টি বছর! এখন সাঁতারপুলে এমন অনেকেই আছে, যাদের তখনো জন্মই হয়নি। তবু এভান্স হাল ছাড়ার পাত্রী নন। অলিম্পিক দলের ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার জন্য গেল সপ্তাহে লড়াই করেছেন অস্টিন গ্রাঁ প্রিঁতে। এবং কী আশ্চর্যের সংবাদ, ৪০০ ও ৮০০ মিটারে এভান্স কোয়ালিফাইং টাইমিং ঠিকই গড়েছেন! এখন চূড়ান্ত লড়াইয়ে কোয়ালিফাই করতে পারলেই টিকিট মিলবে লন্ডন অলিম্পিকের।
এভান্স আশাবাদী, স্বপ্ন তাঁর পূরণ হবেই। তাঁর আছে প্রবল আত্মবিশ্বাস। তবে এ-ও স্বীকার করে নিলেন, ফেরার ঘোষণা দিয়ে মাত্র ছয় মাসের অনুশীলন সম্বল করে এই প্রজন্মের সাঁতারুদের বিপক্ষে লড়াই করার আগে একটু ভয় ভয়ও করছিল, ‘এখন তো আসলে পুলে নয়, আমি থাকি দর্শকসারিতে। হুট করে পুলে নেমে এলাম সেই সব মেয়েদের সঙ্গে সাঁতরাতে, যাদের বেড়ে ওঠা আমার চোখের সামনেই।’
কাবানাসের ফেরা
এখনো মাথার ভেতরে গেঁথে আছে সেই বুলেট আর দুঃসহ স্মৃতি। মৃত্যুকে একদম নিঃশ্বাস দূরত্ব থেকে দেখে আসা, হাসপাতালের আইসিইউয়ের বিছানায় অচেতন হয়ে শুয়ে যমদূতের সঙ্গে লড়াই। সালভাদর কাবানাস সেই লড়াইয়ে হারেননি। এবারও হারতে চান না। তাঁর বেঁচে ফেরাটা চিকিৎসকদের কাছে ছিল ‘মিরাকল’। এবার পেশাদার ফুটবলে ফিরে প্যারাগুইয়ান এই স্ট্রাইকার জন্ম দিতে চান আরেক ‘মিরাকল’-এর।
ঠিক দুই বছর আগে মেক্সিকোর এক নৈশ ক্লাবে তাঁর মাথায় গুলি করেছিল সন্ত্রাসীরা। মুমূর্ষু অবস্থায় কাবানাসকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু যে সময় প্যারাগুয়ের জার্সি গায়ে তাঁর বিশ্বকাপে খেলার কথা ছিল, সেই সময় অচেতন হয়ে শুয়ে ছিলেন হাসপাতালের বিছানায়।
বুলেটটা মস্তিষ্কের এমন এক জটিল জায়গায় গিয়ে ঢুকে আছে, অস্ত্রোপচার করে তা বের করে আনতে গেলে সেটি হবে জীবনটাকে আরেকবার মৃত্যুঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেওয়া। বুলেট মাথায় নিয়েই কাবানাস বরং দিব্যি সুস্থ আছেন। গত আগস্টে এক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে ফুটবল মাঠেও ফিরেছেন। এবার ফিরতে চান পেশাদার ফুটবলে।
এই ৩১ বছর বয়সীর ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল ১২ ডি অক্টুব্রে দিয়ে, ১৯৯৭ সালে। শুরুর সেই ক্লাবেই ফিরে গেছেন, যদিও ক্লাবটি নেমে গেছে প্যারাগুইয়ান লিগের তৃতীয় বিভাগে। তাতেও খেলতে আপত্তি নেই কাবানাসের।
গত সপ্তাহে ১২ ডি অক্টুব্রের খেলোয়াড় হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হলো তাঁকে। এরপর সাংবাদিকদের কাবানাস বলেছেন, ‘আমি সত্যিই বেশ ভালো আছি। পুরোনো স্মৃতি হাতড়াতে ভালো লাগছে, মনে পড়ছে খুব ছোটবেলায় ১৫ বছর বয়সে এই ক্লাবের হয়ে যাত্রা শুরু করেছিলাম। তখন বেশ গর্ব হয়েছিল আমার। আবারও সেই ক্লাবের হয়ে যেকোনো মুহূর্তে মাঠে নেমে পড়ব।’
ভিসামুক্ত বিশ্বকাপ
রাশিয়ার নিশ্চয়ই খুব দুঃখ হয় যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্বমোড়লগিরি করতে দেখে। এখন কথায় কথায় যেকোনো দেশের ওপর ছড়ি ঘোরাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। কোনো দেশকেই তাদের পরোয়া নেই। অথচ সোভিয়েত ইউনিয়ন যখন ছিল, যুক্তরাষ্ট্রকে এমন মাতব্বরি করার আগে দুবার ভাবতে হতো। সত্যি বলতে কী, স্নায়ুযুদ্ধের সেই সময়টায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে মার্কিন অহংকারকে রুশরা ভেঙে চুরমারও করে দিয়েছিল। বিশেষ করে মহাকাশ জয়ের লড়াইয়ে।
সোভিয়েত ইউনিয়ন আজ নেই, রাশিয়ার সেই দাপট উধাও হয়ে গেছে সেই কবে। তবে সুযোগ একটা পাওয়া গেছে পুরো বিশ্বের কাছে সম্ভ্রম আদায় করে নেওয়ার। ২০১৮ ফুটবল বিশ্বকাপ। ব্রাজিলের পরের বিশ্বকাপটাই হবে রাশিয়ায়।
এই বিশ্বকাপকে রাশিয়া যে স্মরণীয়তম করে রাখার সব রকম চেষ্টাই করবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ২০০৮ অলিম্পিক দিয়ে যেমন পুরো বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল চীন। রাশিয়াও এবার প্রস্তুত হচ্ছে কোমর বেঁধে।
ভ্লাদিমির পুতিন এবার যে ঘোষণাটি দিলেন তাতে ভিসামুক্ত বিশ্ব আন্দোলনের নেতারা খুশি হতে পারেন। রাশিয়ার প্রধানমন্ত্রী জানালেন, ২০১৮ বিশ্বকাপ হবে ভিসামুক্ত। বিশ্বকাপের টিকিটটাই হবে ভিসা, এর জন্য আলাদা করে দূতাবাসে দৌড়ঝাঁপ করতে হবে না। ফরম পূরণের হ্যাপাই সইতে হবে না। শুধু তা-ই নয়, বিশ্বকাপের ভেন্যুতে দর্শকদের বিনে পয়সায় ভ্রমণের ব্যবস্থাও করতে চায় তাঁর সরকার!
প্রথম সিদ্ধান্তটি চূড়ান্ত হয়ে গেছে। টিকিট পেলেই ভিসা লাগবে না। এখন শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণা বাকি। সম্প্রতি রাশিয়া ঘুরে গেলেন ফিফা সভাপতি সেপ ব্ল্যাটার আর উয়েফা প্রধান মিশেল প্লাতিনি। তাঁদের সামনেই পুতিন কথা দিয়েছেন, ‘রাশিয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছে ২০১৮ বিশ্বকাপে টিকিটধারী সব দর্শককে ভিসা ছাড়াই প্রবেশের অনুমতি দেওয়ার। আমরা টিকিটধারীদের আয়োজক শহরগুলোতে বিনা মূল্যে যাতায়াতের ব্যবস্থা করতে পারি কি না, সেটা নিয়েও আলোচনা করছি।’
রাজীব হাসান
ProthomAlo