‘অ্যাশেজ’ শব্দটির সাথে বেশ ভালোভাবেই পরিচিত ক্রিকেট বিশ্ব। ১৮৮২ সালের ২৯ আগস্ট লন্ডনে প্রথম জন্ম হয় এই ‘অ্যাশেজ’ শব্দটির। ইংরেজি শব্দ অ্যাশেজের বাংলা অর্থ হল ‘ছাই’। তবে একশ বছরের বেশি সময় আগ থেকে এখনও অ্যাশেজ নামে টেস্ট সিরিজ খেলছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। যদি বাংলা অর্থটি ব্যবহার করা হয় তবে বলতে হবে ‘ছাই’ জয়ের লড়াইয়ে আবারো যুদ্ধের ময়দানে নামছে ইংলিশ ও অসি খেলোয়াড়রা। তবে অনেক পাঠকের মনে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে ‘অ্যাশেজ’ শব্দটি কিভাবে এলো এবং এই ছাই নিeng-ausয়ে ২২ গজে এত যুদ্ধ কেন খেলোয়াড়দের? ১৮৭৭ সালের ১৫ মার্চ মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বর্তমানে ‘টেস্ট’ নামে পরিচিত বড় ফরম্যাটে মুখোমুখি হয় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। যা ছিল ইতিহাসের প্রথম টেস্ট। ঐ সময় ধারাবাধা কোন নিয়ম না থাকায় ‘যতক্ষণ বা যতসময় বা যতদিন’ খেলা যায় এমন চুক্তিতে টেস্টটি খেলতে নামে দু’দল। তবে অনির্ধারিত সময় পার হবার পরও চারদিন খেলার পর ম্যাচের নিষ্পত্তি ঘটায় ঐ সময়কার খেলোয়াড়রা। ১৫ মার্চ শুরু হওয়া টেস্টটি শেষ হয় ১৯ মার্চ। মাঝে একদিন অর্থাৎ ১৮ মার্চ বিশ্রাম নেয় তারা। টানা ক্রিকেট খেলার ধকলটা সইতে পারেনি তারা। তাই নিজেদের সম্মতিতেই ‘বিশ্রাম’ দিবস পালন করে ইংলিশ ও অসি খেলোয়াড়রা। আর ইতিহাসের প্রথম টেস্টটি ৪৫ রানে জিতে বড় ফরম্যাটে যাত্রা শুরু করে অস্ট্রেলিয়া। ঐ অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট খেলার পর যেন আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া খেলোয়াড়দের। মজা যেন আট ঘাট বেঁধে ঘিরে ধরে তাদের। ফলে পরবর্তীতে টেস্ট খেলার মজায় আরও বেশি মজে যায় তারা। সেই সুবাদে ১৮৮১ সালের মাঝমাঝি সময় চার ম্যাচের সিরিজ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড। আর তাতেই যেন ব্যাপকভাবে প্রসার পেয়ে যায় টেস্ট ক্রিকেট। যাই হোক নিজেদের মাঠে চার ম্যাচের ঐ অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট সিরিজটি ২-০ ব্যবধানে জিতে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এরপর ১৮৮২ সালে টেস্ট নিয়ে নতুন নিয়ম চালু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। অনির্ধারিত সময়ের টেস্ট নীতি বাদ দিয়ে তিন দিনের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত নেয় তারা। এটি একরকম পরীক্ষামূলকই বলা যায়। কারণ টানা অনির্ধারিত সময়ের ম্যাচ খেলতে পারছে না খেলোয়াড়রা। তো ম্যাচটির সময় নির্ধারণ করে দিলে কি অবস্থা হয় তা জানাই ছিল দুই বোর্ডের প্রধান লক্ষ্য। সেই সুবাধে ওভালে ১৮৮২ সালের ২৮ আগস্ট তিন দিনের এক ম্যাচের সিরিজ খেলতে নামে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু অবাক করার মত বিষয় ঘটে ঐ ম্যাচে। দুই দিনে নিষ্পত্তি হয়ে যায় ম্যাচটি। তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক টেস্টটি মাত্র ৭ রানে জিতে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে পড়ে অস্ট্রেলিয়া। পক্ষান্তরে আগুনে পুড়ে যাবার মত অবস্থা ঘটে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডের হারে স্বাগতিকদের ক্রিকেট মৃত্যুর সকল বাস্তবতা দেখে ফেলেছিল সেদেশের ক্রিকেটবোদ্ধা ও গণমাধ্যমগুলো। সে সময়কার সবচেয়ে জনপ্রিয় পত্রিকা দ্য স্পোর্টিং টাইমসে বেশ বড়সড়ভাবে একটি রিপোর্টে প্রকাশ করে, ‘ইংল্যান্ড ক্রিকেটের মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে গেল। এখন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের অস্তিত্ব বলতে শুধু ‘ছাই’ আছে। আর সেই ‘ছাই’ সঙ্গে নিয়ে আনন্দ করতে করতে দেশে ফিরে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়া।’ আর তখন থেকে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট সিরিজের নামকরণ হয় ‘অ্যাশেজ’। কারণ অ্যাশেজের বাংলা অর্থই হল ‘ছাই’। যেই টেস্ট থেকে ইংল্যান্ড ক্রিকেটের ‘মৃত্যু’ এবং ‘অ্যাশেজ’ নামকরণ করা হয়েছিল, তার পরের সিরিজটি অনুষ্ঠিত হয় অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে। ফলে তিন ম্যাচের ঐ সিরিজটি ‘অ্যাশেজ’ নামে পরিচিত লাভ করে। আর ১৮৮২ সালের ৩০ ডিসেম্বর থেকে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজ লড়াই শুরু করে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। আর ঐ সিরিজ থেকে নিজেদের ক্রিকেটের নতুন দিগন্ত সূচনা করে ইংল্যান্ড। ২-১ ব্যবধানে প্রথম ‘অ্যাশেজ’ নামে টেস্ট সিরিজটি জিতে সবাইকে তাক লাগিয়ে দেয় ইংলিশরা। তাই বলা যায়, ১৮৮২ সালের শেষ দিকে প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ‘অ্যাশেজ’ সিরিজ। তবে সেখানেই থেমে থাকেনি তা, ২০১১ সাল পর্যন্ত মোট ৬৬টি ‘অ্যাশেজ’ সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। আর তাতে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই বা তুমুল লড়াই অথবা তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক লড়াই যাই বলা হোক না-কেন সবই হয়েছে। পরিসংখ্যান তেমনই বলছে। এখন পর্যন্ত ৬৬টি ‘অ্যাশেজ’ লড়াইয়ে ৩১টি সিরিজ অস্ট্রেলিয়া ও ৩০টি সিরিজ ইংল্যান্ড জিতেছে। আর ৫টি সিরিজে জয় বা হারের স্বাদ পায়নি কোন দলই। তাই আসন্ন ‘অ্যাশেজ’ সিরিজ জিতে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাওয়াই লক্ষ্য থাকবে অসিদের। আর সিরিজ জয়ের পাশাপাশি পরিসংখ্যান সমতা আনাই প্রধান লক্ষ্য ইংল্যান্ডের।

আপনার মতামত দিন