সাদা পোশাকে ক্রিকেটকে এখনও বলা হয়ে থাকে ভদ্রলোকদের খেলা। রঙ্গিণ পোশাকে শত ওভারের ক্রিকেট আবিষ্কারের পর তার জৌলুস কমে যায় একচিমটি। তবুও এরপর আবিষ্কৃত টি২০ ফরম্যাটের ক্রিকেট। মূলত শত ওভারের ক্রিকেটিকে নতুন ফরম্যাটে দাড় করিয়ে ক্রিকেট বোদ্ধারা উদ্ভাবন করেছে টি২০ ক্রিকেট। চার-ছয়ের ফুলঝুরিতে বিশাল আকাররের রান,মাঠের তাপ ও উত্তেজনা, চিয়ার লিডারদের নাচ-গান। এগুলোই এই শর্ট ফরম্যাটের ক্রিকেটকে করেছে আরও রঙ্গিণ। তবে এই রঙ্গিণের পিছনে রয়েছে অন্ধকার নামক এক অধ্যায়। যেখানে রয়েছে ফিক্সারদের কালো থাবা আর অল্প অর্থে ক্রিকেটার বিকিয়ে যাবার সুযোগ। রূপালী পর্দার একঝাঁক তারকা ও ধর্নাঢ্য অভিজাতদের দ্যুতি ছড়ানো উপস্থিতি, সবকিছু মিলিয়ে এই খেলাটির জনপ্রিয়তা আকস্মিকভাবে বেড়ে যায় বহুগুণে। সোমবার টি২০ ক্রিকেটের ১০ বছরপূর্তির দিনটি গ্রাস করে নিয়েছে নানা দুর্নীতি ও কেলেঙ্কারি। যা খেলার মানকে নামিয়ে নিয়ে আসছে আর বাড়ছে অপরাধ জগতের নানা অধ্যায়। ২০০৩ সালে জুনের মধ্যভাগে এই খেলাটি প্রথম মাঠে গড়িয়েছিল ইংল্যান্ডে। আর এখন টি২০ ফরম্যাটের এই ক্রিকেট ছড়িয়ে দিয়েছে আইপিএল,বিপিএল,এসএলপিএল,বিগ ব্যাশ,আর নতুন করে ক্যারিবীয়ান ক্রিকেট লিগ। সোমবার এএফপির কাছে শ্রীলংকার সাবেক অধিনায়ক ও লিজেন্ড অর্জুনা রানাতুঙ্গা বলেছেন, টি২০ ক্রিকেট হচ্ছে বড় অংকের ও দ্রুত অর্থ উপার্জনের মাধ্যম। টি২০ ক্রিকেটের পথে হেঁটে আমরা আমাদের স্বাভাবিক ক্রিকেটকেই ধ্বংস করতে যাচ্ছি। দর্শকরা একবার যদি এই খেলার ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলে তাহলে আমরা একেবারেই গভীর খাদে পড়ে যাবো। তবে এই টি২০ আবিষ্কারের পিছনে ইংলিশদের ভূমিকা থাকলেও এর ব্যাপক প্রসার পেয়েছে আইপিএল বা ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ। ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই টূর্ণামেন্ট একে একে ছয়টি আসর পার করে দিলেও এর গায়ে লেগে আছে বিশাল আকারের কলঙ্ক এবং স্পট ফিক্সিং-এর ছাপ। সবকিছু ছাপিয়ে গত আইপিএল-এ মূল আলোচনার বিষয় হয়ে ওঠে স্পট ফিক্সিং। এই অভিযোগে পুলিশের হাতে আটক হন ভারতের তিন ক্রিকেটার। বাজিকরদের অবৈধ কাজে সহযোগিতা করেছেন তারা। দুর্নীতির কলঙ্ক ছুয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি এন শ্রীনিবাসনকেও। কারন বিষয়টি তদন্ত করতে গিয়ে তার মেয়ের জামাই যিনি চেন্নাই সুপার কিংসের মালিক তার সংশ্লিষ্টতা ও পেয়েছে তদন্ত কর্মকর্তারা। বিষয়গুলো আমলে নিয়ে ভারতীয় বোর্ড ইতোমধ্যেই চিয়ার লিডারদের না আনা সহ ম্যাচ পূর্ব পার্টি বন্ধের চিন্তা করছে। আইপিএলের দল দিল্লি ডেয়ার ডেভিলসের সমর্থক প্রিতম কুমার সাহা এএফপিকে বলেন, ক্রিকেটকে কলুষমুক্ত করার জন্য যেকোনো পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হবে। কিন্তু সব ধরনের বিনোদন একেবারেই বন্ধ করে দেয়া যাবে না। কারণ কিছু কিছু জিনিস এখন টি২০ ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িয়ে গেছে।” মদন লাল এএফপিকে বলেন, এটির উন্নতির জন্য অনেক সুযোগ রয়েছে। মাঠে এটি প্রচুর বিনোদন দেয়। কর্তৃপক্ষ যদি আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে তাহলে টি২০ অবশ্যই টিকে যাবে।”অভিশপ্ত এই ক্রিকেট থেকে বের হয়ে আসতে হবে সেটা জেনে ক্রিকেটের কর্তাদের এগুতে হবে। তবে ক্রিকেটের সেই রঙ্গিণ দিনগুলো মাঠে আর মাঠের বাহিরে ফিরে আসুক সেটাই বোদ্ধাদের কাম্য।
